পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি – পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ১ম অধ্যায়

পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি – পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ১ম অধ্যায়

পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ১ম অধ্যায়
পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ১ম অধ্যায়

পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ১ম অধ্যায়: মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধভাবে বাস করাই মানুষের সহজাত ধর্ম। তাই প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল (Aristotle) যথার্থই বলেছেন যে, “মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব।” (Man is by nature a social and political being.) সমাজ বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের নাগরিক জীবনকে কেন্দ্র করে কতকগুলো প্রথা, নিয়মকানুন ও রীতিনীতি গড়ে উঠেছিল।

বর্তমান সময়েও দেখা যায়, সমাজবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ মানুষের নাগরিক জীবনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রথা, নিয়মকানুন, রীতিনীতি ও আচার-অনুষ্ঠান প্রচলিত রয়েছে। তাই নাগরিক জীবনের এসব দিক নিয়ে আলোচনার জন্য গড়ে উঠেছে জানার ও জ্ঞানের এক বিশেষ শাখা, যা আজ পৌরনীতি (Civics) নামে পরিচিত। এই অধ্যায়ে পৌরনীতির ধারণা, পরিধি, সুশাসনের ধারণা, বৈশিষ্ট্য, পৌরনীতি ও সুশাসনের ক্রমবিকাশ এবং পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে জ্ঞানের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।


পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ১ম অধ্যায়

১. জেন্ডার স্টাডিজ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: জেন্ডার স্টাডিজ বলতে নারী ও পুরুষের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সত্তা এবং মর্যাদার বিভিন্ন দিকের অধ্যয়নকে বোঝায়। দেশের উন্নয়নের জন্য নারী-পুরুষ উভয়ের অংশগ্রহণ আবশ্যক। আর তাই প্রয়োজন নারী-পুরুষের সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়ন। সময়োপযোগী এ বিষয়ে অধ্যয়নকে বলা হয় জেন্ডার স্টাডিজ। সমাজের সকল বিষয়ের সঙ্গে জেন্ডার বিষয়টি জড়িত।

২. তুমি কীভাবে একজন স্থানীয় নাগরিক?

উত্তর: আমি স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে এর দায়িত্ব-কর্তব্য পালন এবং অধিকার ভোগ করার মাধ্যমে আমি একজন স্থানীয় নাগরিক। স্থানীয় নাগরিক হিসেবে আমি পরিবার, গ্রাম, ইউনিয়ন কাউন্সিল বা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদস্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে আমি বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করি যা নাগরিকতার স্থানীয় বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর এ কারণেই আমি একজন স্থানীয় নাগরিক।

৩. পৌরনীতি বলতে কী বোঝ?

উত্তর: পৌরনীতি বলতে মূলত নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞানকে বুঝি। পৌরনীতি হলো নাগরিকতা বিষয়ক অধ্যয়ন শাস্ত্র। এটি সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা। পৌরনীতি নাগরিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকে। তাছাড়া পৌরনীতি মানুষের কার্যাবলি, অভ্যাস ও আচরণ বিশ্লেষণ এবং রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি পর্যালোচনার আলোকে আদর্শ নাগরিক জীবনের শিক্ষা দান করে থাকে।

৪. স্বচ্ছতা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: স্বচ্ছতা বলতে সুষ্পষ্টতাকে বোঝায়। স্বচ্ছতা হলো এমন একটি বিমূর্ত ধারণা যা দ্বারা মানুষ উপলব্ধি করতে পারে যে, কোন কর্মকাণ্ড কতটুকু নীতিসংগত বা বৈধ। এককথায় কোনো আইন ও নীতি মেনে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়ন করাই হলো স্বচ্ছতা।

এটি সুশাসনের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। সরকারি কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর সুশাসন নির্ভর করে। তাই স্বচ্ছতা তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন সরকার তাদের কর্মকাণ্ড, নীতিমালা, সিদ্ধান্ত জনগণকে অবহিত করবে।

৫. পৌরনীতিকে নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান বলা হয় কেন?

উত্তর: নাগরিক ও নাগরিক জীবনের সাথে জড়িত সব বিষয় নিয়ে এ শাস্ত্রে আলোচিত হয় বিধায় পৌরনীতিকে নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান বলা হয়। নাগরিকের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নাগরিক জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়াকলাপ নিয়ে পৌরনীতি অনুশীলন করে।

তাছাড়া নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের সাথে জড়িত ঘটনাবলি ও কার্যকলাপ এ শাস্ত্রে আলোচিত হয়। তাই নাগরিক জীবনের ধর্মীয়, নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা সার্বিক দিকের কমবেশি আলোচনা পৌরনীতির বিষয়বস্তু।

৬. পৌরনীতি সম্পর্কে অধ্যাপক ই.এম হোয়াইটের সংজ্ঞা কী?

উত্তর: পৌরনীতি সম্পর্কে অধ্যাপক ই. এম. হোয়াইট (Prof. E.M. White) তাঁর “The Philosophy of Citizenship গ্রন্থে বলেছেন যে, “পৌরনীতি হচ্ছে জ্ঞানের সেই শাখা, যা নাগরিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয়, জাতীয় ও মানবতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।”

(“Civics is that branch of human knowledge which deals with everything relating to a citizen- Past, present and future, local, national and human.”) অর্থাৎ তার মতে “নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল প্রশ্ন নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাই পৌরনীতি।”

৭. যে চিন্তা-ভাবনা মানুষের আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে সেটি সম্পর্কে লেখ।

উত্তর: যে চিন্তা-ভাবনা মানুষের আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে সেটি হলো নৈতিকতা। নৈতিকতা হলো সমাজের বিবেকের সাথে সংগতিপূর্ণ কতকগুলো ধ্যান-ধারণা ও আদর্শের সমষ্টি বা সমাজস্বীকৃত আচরণবিধি।

নৈতিকতার প্রভাবে মানুষ আইন মেনে চলে, শৃঙ্খলার পরিপন্থি কোনো কাজ করে না এবং রাষ্ট্রের অনুশাসনকে মেনে চলে। আর এভাবেই নৈতিকতা মানুষের বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মানুষের চিন্তা- চেতনাকেও নিয়ন্ত্রণ করে।

৮. স্বচ্ছতা’ কীসের পূর্বশর্ত? ব্যাখ্যা দাও।

উত্তর: ‘স্বচ্ছতা’ সুশাসনের পূর্বশর্ত। স্বচ্ছতা হলো এমন একটি বিমূর্ত ধারণা যা দ্বারা মানুষ উপলব্ধি করতে পারে, কোন কর্মকাণ্ড কতটুকু নীতিসংগত বা বৈধ। এককথায় স্বচ্ছতা হলো কর্মকাণ্ডের সুস্পষ্টতা। এটি সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সরকারি কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর সুশাসন নির্ভরশীল। তাই স্বচ্ছতাকে সুশাসনের পূর্বশর্ত বলা হয়।

৯. পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে ইতিহাসের দুটি সম্পর্ক লেখ।

উত্তর: পৌরনীতি ও সুশাসন হলো নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান আর ইতিহাস হলো মানবজাতির সামগ্রিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইতিহাস এ দুটি বিষয়ের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। তাই পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে ইতিহাসের দুটি সম্পর্ক হলো–

(১) পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইতিহাস একে অপরের সহযোগী ও পরিপূরক। ইতিহাসের সিঁড়িতে ভর করে পৌরনীতি বিকশিত হয়।
(২) পৌরনীতি ও সুশাসন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠন করে। কোনো জাতির রাজনৈতিক ও সুশাসনের পাঠ ছাড়া ইতিহাসের সুস্পষ্ট ধারণা অর্জিত হয় না।

১০. সুশাসনের সাথে জবাবদিহিতার সম্পর্ক নিরূপণ কর।

উত্তর: সুশাসনের সাথে জবাবদিহিতার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সুশাসনের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা হলো প্রথম শর্ত। কারণ জবাবদিহিতা না থাকলে দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না, দুর্নীতির মাত্রা বাড়ে, আইনের অনুশাসনও প্রতিষ্ঠিত হয় না। ফলে যেকোনো সিদ্ধান্ত পক্ষপাতদুষ্ট হয়। সুশাসনের জন্য অন্তরায়। তাই এসব কারণে বলা যায়, সুশাসনের জন্য জবাবদিহিতা অপরিহার্য।

১১. সুশাসন কীভাবে আইনের শাসন নিশ্চিত করে?

উত্তর: সুশাসন রাষ্ট্রের সকল জনগণকে সমান দৃষ্টিতে দেখার মাধ্যমে আইনের শাসন নিশ্চিত করে। সাধারণভাবে সুশাসন বলতে একটি আদর্শ শাসন ব্যবস্থাকে বোঝায় যা একটি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

সুশাসন না থাকলে কোনো দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। কেননা সুশাসনের অভাবে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় যা দেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে সুশাসন রাষ্ট্রের সকল জনগণকে আইনের দৃষ্টিতে সমান চোখে দেখতে শেখায়। আর এভাবেই সুশাসন আইনের শাসন নিশ্চিত করে।

১২. পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে কোন বিষয়ের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। পৌরনীতি ও সুশাসন হলো নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো রাষ্ট্রকেন্দ্রিক বিজ্ঞান। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান হলেও তা রাষ্ট্র নিয়ে আলোচনা করে।

কেননা প্রত্যেক নাগরিকই রাষ্ট্রের সদস্য এবং তার জীবনের বৃহত্তর অংশ রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রকেন্দ্রিক বিজ্ঞান হলেও নাগরিকতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। কারণ নাগরিকদেরকে নিয়েই রাষ্ট্র গঠিত। তাই বলা যায়, উভয়ের সম্পর্ক নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ।

১৩. জবাবদিহিতা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: জবাবদিহিতা বলতে নিজের সম্পাদিত কর্ম সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট ব্যাখ্যাদানের বাধ্যবাধকতাকে বোঝায়। যখন কোনো ব্যক্তি তার কাজের জন্য কতার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট উত্তর প্রদানে বাধ্য থাকে তাকে জবাবদিহিতা বলে। জবাবদিহিতা সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

জবাবদিহিতা ছাড়া সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। তাই সুশাসনে জবাবদিহিতা বলতে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের পাশাপাশি নাগরিক সেবাদানকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহিতাকেও অন্তর্ভুক্ত করে।

১৪. পৌরনীতি ও অর্থনীতির সম্পর্ক লেখ।

উত্তর: পৌরনীতি ও অর্থনীতি উভয়ের মধ্যকার সম্পর্ক নিবিড় ও ঘনিষ্ট। পৌরনীতি ও অর্থনীতি উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞান। সামাজিক বিজ্ঞানের এ দুই শাখাই মানুষের কল্যাণ ও উন্নত জীবনে ভূমিকা রাখে। যে কারণে পৌরনীতি নাগরিকদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে শিক্ষা দেয়।

পক্ষান্তরে অর্থনীতি নাগরিকদের অর্থ উপার্জন, অর্থ ব্যয় এবং সীমিত অর্থে কীভাবে বহুবিধ চাহিদা পূরণ করতে হয় সে সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। আর এ সূত্র ধরেই পৌরনীতি ও অর্থনীতি একে অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

১৫. সুশাসন কাকে বলে?

উত্তর: নাগরিকদের মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে যে শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় তাকে সুশাসন বলা হয়। সভ্যতার ক্রমবিকাশ আর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে। আর এ চেষ্টার উন্নততর কৌশল হিসেবে সূচনা ঘটেছে সুশাসনের। তাই মূলত সুশাসন হচ্ছে অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল ও ন্যায়সংগত ব্যবস্থা যা আইনের শাসন নিশ্চিত করে।

১৬. পৌরনীতি ও সুশাসন কীভাবে নাগরিক চেতনা বৃদ্ধি করে?

উত্তর: পৌরনীতি ও সুশাসন রাজনীতি সম্পর্কিত সামগ্রিক বিষয় আলোচনা করার মাধ্যমে নাগরিক চেতনা বৃদ্ধি করে। পৌরনীতি ও সুশাসনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো পরিবার, সমাজ, সরকার, রাজনৈতিক দল ইত্যাদি।

কাজেই এ বিষয়টি পাঠের মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অতীত ও বর্তমান এবং এগুলোর বর্তমান প্রকৃতি, কার্যাবলি ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারে। ফলে এই শাস্ত্র পাঠে মানুষের রাজনৈতিক জ্ঞান ও নাগরিক চেতনা বৃদ্ধি পায়।

১৭. Civics শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে লেখ।

উত্তর: Civics শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ Civis এবং Civitas থেকে। পৌরনীতি শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Civics। এটি ল্যাটিন শব্দ সিভিস (Civis) ও সিভিটাস (Civitas) থেকে এসেছে। সিভিস শব্দের অর্থ হলো নাগরিক এবং সিভিটাস শব্দের অর্থ হলো নগররাষ্ট্র। অর্থাৎ শব্দগত অর্থে পৌরনীতি বা Civics হলো নগররাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকদের আচরণ ও কার্যাবলি সংক্রান্ত বিজ্ঞান।

১৮. নগররাষ্ট্র বলতে কী বোঝ?

উত্তর: নগররাষ্ট্র বলতে ছোট ছোট নগর বা অঞ্চলকে নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রকে বোঝায়। প্রাচীনকালে ছোট ছোট নগর বা অঞ্চলকে নিয়ে নগররাষ্ট্র গঠিত হতো। এসব নগর রাষ্ট্রের আয়তন ও লোকসংখ্যা ছিল সীমিত যেমন— এথেন্স, স্পার্টা। তবে এসব নগররাষ্ট্রের সকল সদস্যকে নাগরিক বলা হতো না। একমাত্র যারা রাষ্ট্রের কাজে (ভোটদান, নির্বাচন) অংশগ্রহণ করত তাদেরই নাগরিক বলা হতো।

১৯. “পৌরনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরস্পর সংযুক্ত বিষয়”— ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: পৌরনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান উভয়ই রাষ্ট্রের মানুষের কার্যাবলি পর্যালোচনা করে বিধায় এ বিষয় দুটি পরস্পর সংযুক্ত। পৌরনীতি নাগরিকের অধিকার, কর্তব্য এবং নাগরিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা করে।

অপরপক্ষে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নাগরিকের রাজনৈতিক সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক, রাজনৈতিক অধিকার, কর্তব্য এবং রাজনৈতিক দর্শনের পর্যালোচনা করে। সুতরাং পৌরনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরস্পর সংযুক্ত বিষয়।

২০. “পৌরনীতি সমাজবিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল।”— ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া পৌরনীতির আলোচনা সম্পূর্ণ হয় না বিধায় পৌরনীতি সমাজবিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। পৌরনীতির মূল বিষয়বস্তু হলো নাগরিক। আর সমাজের উৎপত্তি, বিকাশ, বিবর্তন এসবই হলো সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়।

সামাজিক পরিবর্তনের কোনো এক স্তরে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের কারণে সামাজিক কাঠামোর অভ্যন্তরে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটে। ধীরে ধীরে এ রাষ্ট্রব্যবস্থা মজবুত হয়। ফলে জনগণের অংশগ্রহণের মাত্রারও পরিবর্তন ঘটতে থাকে। সুতরাং পৌরনীতির আলোচ্য বিষয়ের অতীত দিকগুলো সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে নিহিত। তাই সমাজবিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া পৌরনীতির আলোচনা সম্পূর্ণ হতে পারে না।


আশাকরি “পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি – পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র ১ম অধ্যায়” নিয়ে লেখা আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। পৌরনীতি ও সুশাসন এর সকল অধ্যায় এর প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2017 ThemesBazar.Com